breaking

Tuesday 20 July 2021

জগন্নাথ কি এই কদিন আদৌ মাসির বাড়িতে ছিলেন?

                      (গুন্ডিচা মন্দির)
     
    প্রতি বছরই হাজারও বছরের প্রথা মেনে আষাঢ়ি শুক্ল দ্বিতীয়াতে পুরীতে অনুষ্ঠিত হয় সর্বজন বিদিত জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। আস্থা, ভক্তি, আবেগ, উত্তেজনা মিশ্রিত জনসমুদ্রের মধ্য দিয়ে রথ ত্রয় কার্যত ভাসতে ভাসতে গন্তব্যে পৌঁছয়।
     এবার প্রশ্ন হল গন্তব্যটা কোথায়? এর উত্তরে আমরা সাধারণত জানি যে জগন্নাথ তার অগ্রজ বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রা কে নিয়ে বছরে একবারের জন্য মাসির বাড়িতে বেড়াতে যান। এবং সপ্তাহ খানেক মাসির আদর উপভোগ করে ফিরে আসেন তাদের নিজ মন্দিরে। কিন্তু বিষয়টা কি আদৌ তাই?
       জগন্নাথ তার সহোদর যুগলের সাথে যেখানে সপ্তাহ খানেকের জন্য বেড়াতে যান সেটা কিন্তু জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি নয়। সেটা হল গুন্ডিচা মন্দির। এই গুন্ডিচা মন্দির আসলে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সহধর্মিনী গুন্ডিচা দেবীর নাম অনুসারে নামাঙ্কিত।
       পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে নীলমাধবের স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন যখন সমুদ্রে ভেসে আসা কাষ্ঠ খন্ড দ্বারা ভগবানের মূর্তি নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করেন তখন স্বয়ং বিশ্বকর্মা বৃদ্ধ কাষ্ঠ শিল্পীর ছদ্মবেশে রাজার নিকট মূর্তি নির্মাণ করার দায়িত্ব চেয়ে নেন। তবে, তার শর্ত ছিল যে, নির্মাণকার্য চলাকালীন কেউ যেন নির্মাণ কক্ষে প্রবেশ না করে। নির্মাণকার্য শুরু হবার বেশ কিছুদিন পর অতিকৌতুহলী রানী গুন্ডিচা নির্মাণ কক্ষের দরজা খুলে দিলে শিল্পী অন্তর্ধান হন এবং রাণী নির্মাণ কক্ষে চারটি অসম্পূর্ণ মূর্তি দেখতে পান। যাদেরকে বর্তমানে চতুর্ধা মূর্তি বলা হয় অর্থাৎ জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা ও সুদর্শন।
    
       ঈশ্বরের আদেশে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন সেই অসম্পূর্ণ মূর্তি নবনির্মিত শ্রী মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু তার জন্যই মূর্তির এই অসম্পূর্ণ স্বরূপ তাই রানী গুন্ডিচা প্রবল আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকেন। তখন জগন্নাথ দৈবভাষে তাকে জানান তিনি স্বয়ং তার দাদা ও বোনের সহিত গুন্ডিচা মন্দিরে বছরে একবার আসবেন এবং তার মনের সমস্ত গ্লানিকে দূরীভূত করবেন। এবং ৮ দিন ৮ রাত সেখানেই থাকবেন।
                       (পোড়াপিঠা)
   তবে, মাসির বাড়ি তত্ত্বটা যে একেবারে ভিত্তিহীন তাও কিন্তু নয়। জগন্নাথ দেব গুন্ডিচা মন্দির থেকে তার শ্রীমন্দিরে ফিরে যাওয়ার সময় যাত্রাপথের মধ্যবর্তীস্থানে একটি বিশেষ ভোগ গ্রহণ করেন এবং রথ কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নেয়। সেখানে জগন্নাথকে নিবেদন করা হয় “পোড়াপিঠা” ভোগ, আর এই ভোগ তাকে অর্পণ করা হয় “মৌসিমা” মন্দিরের তরফ থেকে।  
                   (মৌসিমা মন্দির)                   লৌকিক মতানুসারে এই মৌসিমা বা অর্ধাশোসিনি দেবী হলেন জগন্নাথের মাসি এবং শ্রীক্ষেত্র পুরীর একজন অভিভাবক।
লেখনী✍️✍️: Soumitra Das (B.A, DEd)