breaking

Sunday, 18 July 2021

ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ও ডাক্তারকে নেয়া হয়েছিল না মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি

ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর ১৬০ তম জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য গুগোল একটি প্রকাশ করেছে, যে ডুডলটির ডিজাইনার ব্যাঙ্গালোরের আর্টিস্ট Oddrija।
 
 কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার চন্দ্রমুখি বসুর সহিত প্রথম ভারতীয় যুগ্ম মহিলা স্নাতক। মহিলা স্নাতক ব্যাপারটি আধুনিককালে কোন বিশেষ ছাপ না ফেললেও, কাদম্বিনী গাঙ্গুলীদের যে সময়টা ছিল সে সময় তা ছিল অকল্পনীয়। নারীদের শিক্ষার পরিসর ছিল খুবই কম, সে ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার তো কোন প্রশ্নই নেই।
১৮৬১ সালে ভাগলপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, বাবা ব্রজকিশোর বসু। ১৮৭৫ সালে কলকাতা এসে তাঁকে হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়ের বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা পরিচালক দ্বারকানাথের জীবনাদর্শে তিনি মুগ্ধ হয়ে পড়েন। এই মুগ্ধতা প্রনয়ের জন্ম দেয় এবং পরবর্তীতে তা  বিয়ের পিঁড়ি অবধি গড়ায়।

   বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় পরবর্তীতে বেথুন স্কুলের সঙ্গে মিলিত হয়ে যায়। এই স্কুলেরই দুই ছাত্রী কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ও সরলা দেবী এন্ট্রান্স পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত হলেও, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাঁধ সাধে। কারণ সেই সময় নারীদের উচ্চশিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিলনা। দ্বারকানাথ মেয়েদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করে অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আর্থার হবহাউসও নারীদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। তাদের প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার মেয়েদের জন্য উন্মুক্ত হয়। তবে বলা হয় তাদের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসার আগে অপর একটি পরীক্ষা দিতে হবে। সেই পরীক্ষায় কাদম্বিনী ও সরলা দেবী দুজনেই উত্তীর্ণ হন। এরপর প্রবেশিকা পরীক্ষার সময় এলে সরলা দেবীর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তিনি বসতে পারেন না, কাদম্বিনী দেবী একাই পরীক্ষায় বসেন।
১৮৭৮ এর ডিসেম্বরে প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হন। বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাসিক ১৫ টাকা বৃত্তি দান করেন। তবে শর্ত ছিল তাকে আগে এফ এ পড়তে হবে। ছোটলাট ও উপহার স্বরূপ তাকে পাঠ্যবই ও স্বর্ণপদক পাঠান।
রীতিমতো কাদম্বিনী দেবীর জন্যই বেথুন স্কুল বেথুন কলেজে রূপান্তরিত করা হয়। ১৮৮০ সালে এফ এ পাস করে বেথুন কলেজে বি.এ তে ভর্তি হন। ফ্রী চার্চ নর্মাল স্কুল থেকে এফ এ পাশ করে চন্দ্রমুখি বসু ও বেথুন কলেজে ভর্তি হন।
১৮৮২ সালে প্রথম ভারতীয় মহিলা স্নাতক হিসেবে দুজনেই গ্রাজুয়েট হন।
   এফ এ পাশ করার পরেই কাদম্বিনী দেবী মেডিকেল কলেজে পড়ার যোগ্যতা লাভ করলেও তাকে তখন ভর্তি নেওয়া হয়না স্নাতক নয় এই বলে। ১৮৮৩ সালে স্নাতক হবার পর ডাক্তারির জন্য আবেদন করলেও একই বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। শিক্ষা দপ্তর মেয়েদের ডাক্তারি পড়ার ব্যাপারে রাজি থাকলেও মেডিকেল কাউন্সিল আপত্তি সাধে। অনেক আন্দোলনের পর ছোটলাট রিভার্স টমসনের হস্তক্ষেপে তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সম্মতি দেওয়া হয়।
প্রথম মহিলা ডাক্তার হিসেবে কাদম্বিনী দেবীর নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকলেও এই স্বীকৃতি প্রাপ্তি এর পেছনে ছিল এক কঠোর লড়াই।