এবারও হয়তো কোনো ছোট্ট “রাধারাণী” তার বনফুলের মালা গেঁথে নিয়ে যাবে না রথের মেলায়। জিলাপি আর পাপড়ের লোভনীয় স্বাদ দেবে না হাতছানি। করোনা আবহে গতবছরের মতো এবছরও বন্ধ, বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন ও বাংলার প্রাচীনতম শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ। ৬২৫ বছরের ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার।
ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামের এক বঙ্গজ সন্তান পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে নিজে হাতে ঠাকুরকে ভোগ খাওয়াতে চায়, কিন্তু তাঁকে ঢুকতে দেওয়া না হলে তিনি সেখানেই আমরণ অনশন করে জীবন বিসর্জন দেবার জন্য প্রচেষ্ট হন। এমন সময় এক স্বপ্নাদেশে তিনি হুগলির তীরে মাহেশে রথ নির্মাণ করার নির্দেশ পান। স্বপ্নে তাকে বলা হয়, একটা নিম কাঠ সে নদীতে পাবে, তাই দিয়ে দেবমূর্তি তৈরী করতে হবে। ধ্রুবানন্দ দেশে ফিরে আসেন, দীর্ঘ তিন বছরের অপেক্ষার পর তিনি কাঠ পান এবং রথ নির্মাণ করেন।
একই রকমভাবে ইসকন প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ তার বিদেশী ভক্তদের নিয়ে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে গেলে, যবন তকমা দিয়ে তাদের ঢুকতে বাঁধা দেওয়া হয়। তার পরেই প্রভুপাদ ইস্কনে রথের আয়োজন করেন।
প্রথমে মাহেশের রথ কাঠের হলেও ১৮৫৫ সালে শ্রীরামপুরের এক ভক্ত কৃষ্ণরাম বসু তৎকালীন সময়ে ২০ হাজার টাকা খরচ করে মার্টিন বার্ন কোম্পানির সাহায্যে লোহার রথটি তৈরী করেন। রথটির উচ্চতা ৫০ ফুট, ওজন ১২৫ টন ও ১২ টি চাকা বিশিষ্ট। পুরীর রথের মত এখানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার জন্য আলাদা আলাদা রথ নেই, বরং একটা রথেই তারা থাকেন। মাহেশ থেকে শ্রীরামপুরের গোপীনাথ মন্দির (মাসির বাড়ি) অবধি রথ টানা হয়।
শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু একদা এই রথ দেখতে এসে এর রূপে মুগ্ধ হয়ে একে “নব নীলাচল” নাম দেন। সেই থেকে এটি নব নীলাচল রথ নামেও পরিচিত। শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ কমল কার পিপিলাই প্রথম মাহেশের মন্দিরের সেবায়েত নিযুক্ত হন। বর্তমানে এই মন্দিরের সেবায়েত পিয়াল অধিকারী।
জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রকে একটি বিশেষ পূজা করা হয় যা দামোদর পুজা নামে পরিচিত।