১৯৪০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অসুস্থ শরীরে পাহাড়ের প্রকৃতির টানে এবং অবশ্যই পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে দেখতে শান্তিনিকেতন থেকে কালিম্পং গেলেন। কিন্তু কালিম্পং এর জল হাওয়ার সহ্য হলো না তার। ২৬ শে সেপ্টেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। দার্জিলিং থেকে ডাক্তারবাবু এলেন অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিলেও প্রতিমাদেবী রাজি হলেন না। কিছুটা সুস্থ হলে কবিকে নিয়ে আসা হলো কলকাতায়, উদ্দেশ্য প্রখ্যাত চিকিৎসক নীলরতন সরকার কে দিয়ে কবির চিকিৎসা করানো।
১৯১৬ সাল থেকে কবির চিকিৎসা করে আসছিলেন তিনি কিন্তু তিনি তখন গিরিডিতে থাকায় চিকিৎসার ভার নিলেন আরেক প্রখ্যাত চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়। সব দেখে তিনি অস্ত্রোপচারের পক্ষে সায় দিলেন তবে এত অসুস্থতার মধ্যেও তার কলমে 'রোগশয্যা' , আরোগ্য, জন্মদিন - এর মত সৃষ্টিসম্ভার এ ফুটে উঠল তার জীবনের শেষ অধ্যায়ের উপলব্ধি। কবি হয়তো শুনতে পেয়েছেন অন্তিমের আহ্বান তাই তার ইচ্ছা অনুসারে কবিকে কলকাতা থেকে বিশেষ ট্রেন আনা হলো তার প্রিয়তম শান্তিনিকেতনে। একদিন যে আম্রকুঞ্জ কবি, তার সহচর আর ছাত্র-ছাত্রীদের আলাপচারিতায় মুখরিত থাকত সেখানে নামল নীরবতা। ১৯৪১ সালে শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় আবার তাকে নিয়ে আসা হলো কলকাতায়। গিরিডি থেকে তড়িঘড়ি ছুটে এলেন ডঃ নীলরতন সরকার সোজা চলে গেলেন ঠাকুরবাড়ির মহির্শী ভবনের দোতলায় । প্রায় অচেতন কবির নাড়ির স্পন্দন অনুভব করার চেষ্টা করলেন, পরম মমতায় কবির কপালে হাত রাখলো তারপর কবির প্রিয় ডাক্তারবাবু ছলছল চোখে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। বাড়ির বাইরে যখন মানুষের ভিড় বাড়ছে কলকাতা এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শুভানুধ্যায়ীদের ঢল নামছে ঠাকুরবাড়িতে।
অবশেষে ১৯৪১ সালের ৭ ই আগস্ট অর্থাৎ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শে শ্রাবণ দুপুর ১২ কিছু পরেই নির্বাপিত হল বিশ্ব কবির জীবন প্রদীপ। কবিরই নাম দেওয়া আকাশবাণী থেকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কবির মৃত্যু এবং কলকাতায় নিমতলায় দেহ সৎকারের ধারাভাষ্য ব্যাক্ত করলেন কবি প্রেমিক জনতার হাহাকার
আজ বিশ্ববাসী বিশ্বকবির ৮০ তম বার্ষিকীতে জানাই অন্তরের শ্রদ্ধাঞ্জলি।