“ এসেছে সাম্রাজ্যবাদী পাঠানের দল,
এসেছে মোঘল-
বিজয়রথের চাকা উড়িয়েছে ধুলিজাল,
উরায়েছে বিজয়পতাকা-
‘ ওরা কাজ করে’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ,যার প্রতিটি লাইন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বাস্তবের সাথে জড়িত । দশকের পর দশক পার হচ্ছে কিন্তু ওদের স্থান ওই নিচে, যার মূল্য রাজ-রাজারা থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের ক্ষমতালোভী অর্থ পিপাসুরা কোনদিন দেয়নি। কোন রকমে গা ঝারা দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ। ইতিহাস সাক্ষী আছে হরপ্পা সভ্যতাতেও যেমন শ্রমিকদের শূড়োখ নীচু স্থানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হতো তেমনি হাজার হাজার বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের এখনো সেই রকম ঘিঞ্জি-বস্তি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। যারা শহরের কারিগর তাদের ঠাঁই সেই শহরের পায়ের নিচে। আজ আমরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি যার পিছনে শ্রমিকদের মূল্য অভাবনীয়। রাষ্ট্র সমস্ত জনগণের ন্যূনতম স্বাস্থ্য শিক্ষার দায়িত্ব নেবে সেটা সংবিধানে বলা আছে যা আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য নয় তাই আজও আমরা খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাই কোন অসহায় পিতা তার স্ত্রী ও সন্তানের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য শহরের ম্যানহোলে নামে কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখা যায় তার সেই নিথর দেহ নোংরা ম্যানহোল থেকে তোলা হয় কিন্তু আমরা এতটাই অমানবিক হয়ে উঠেছি যে তাদের ন্যূনতম সুরক্ষা টুকু দেওয়ার কোন প্রয়োজন বোধ করি না , তার ক্ষুধার্ত স্ত্রী-সন্তানের কথা একমুহূর্তেই ভুলে গিয়ে সামাজিক বিনোদনে মেতে উঠি আমরা। কেউবা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও তাহা বেশিদিন এগোয় না, হারিয়ে যায় মানুষের বাস্তবতার ব্যস্ততার ভিড়ে।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তাদের অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য কয়লা খনির শ্রমিকদের ন্যূনতম নিরাপত্তা না দিয়ে দিনের-পর-দিন কাজ করিয়ে চলছে যার ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে একাধিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৭৭ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই অমানবিক পরিস্থিতিতে। এদের না থাকে নিরাপত্তা না আছে এদের কোনো জীবন বীমা, তাহলে এদের সন্তান স্ত্রীদের ভবিষ্যৎ কি অদূরেই নষ্ট হয়ে যাবে?
যেই শ্রমিকরা তিলেতিলে দেশের অর্থনৈতিক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই দেশই তাদেরকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে। কিন্তু কেন আজো আমরা যখন শহরের বস্তির পাশ দিয়ে যাই তখন নাক টিপে মুখ থেকে একরাশ থুতু ফেলতে ফেলতে চলে যাই। একটু পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে এরজন্য দায়ী ও দোষ আমাদেরই। আমরাই তাদেরকে সেই অস্বাস্থ্যকর - ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকতে বাধ্য করেছি। কারণ তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় এবং তাহা উন্নত করার প্রচেষ্টা খুবই ক্ষীণ।
রাজ্য সরকার কেন্দ্র সরকার কর্তৃক তাদের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন আবাসন প্রকল্প , শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্প। এগুলি থাকা সত্ত্বেও সঠিকভাবে এই সমস্ত প্রকল্পে প্রয়োগ হয়ে ওঠে না, সমাজের এক শ্রেনির মানুষের গাফিলতির জন্য।
এক দেশ এক রেশন কার্ড প্রকল্প শ্রমিকদের কিছুটা সুরক্ষা দিলেও এই গণতান্ত্রিক দেশে তাদের অবস্থা বিপজ্জনক ।নিরাপত্তা, জীবন সুরক্ষা ও তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা এবং তাহার উন্নতি সাধন সরকারকে বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন। নইলে দেখা যাবে দশকের পর দশক কেটে যাবে দেশের অর্থনীতির চাবিকাঠি স্তব্ধ হয়ে যাবে আর আমরা ক্রমশ অমানবিক থেকে অমানবিকতর হয়ে পড়বো