breaking

Sunday, 23 May 2021

ঘূর্ণিঝড় "যশ" ধেয়ে আসছে,কিভাবে তৈরি হচ্ছে এই ঝড় বঙ্গোপসাগরে...?!


ঘূর্ণিঝড় কি ? সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রায় প্রত্যেক বছরে জানতে পারি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ক্রমশ এগিয়ে এগিয়ে আসছে কখনো আয়লা কখনো আম্ফান বা কখনো যশ বা ইয়াস নাম নিয়ে। আসুন একটু বিস্তারিতভাবে জানা যাক, কোথায় এই সমস্ত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় ? কেনই বা ? এবং কিভাবে সৃষ্টি হয়? এই সম্পর্কে একটু আলোকপাত করা যাক।

    
আসলে কোনও স্থানে সূর্যের তাপে প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, সেখানকার বাতাস হালকা হয়ে যায়, আর সেই হালকা বাতাস উপরের দিকে উঠতে থাকে। ঠিক যেরকম ভাবে, বাড়িতে যখন আমরা কেটলিতে চা তৈরি করি , আমরা দেখতে পাই যে, জল যখন ফুটতে শুরু করে তখন কেটলির নিচের অংশের জল উপরের দিকে উঠে আসতে শুরু করে, প্রকৃতপক্ষে নিচের জলের তাপমাত্রা বেশি হওয়ার জন্য সেই অংশের জল হালকা হয়ে যায় এবং উপরের দিকে চলে আসে
উপরোক্ত্  ছবিটি থেকে   দেখতে পাচ্ছি কিভাবে গরম হালকা বাতাস নিচ থেকে উপর দিকে উঠে যাচ্ছে এবং পার্শ্ববর্তী অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা এবং ভারী বাতাস ছুটে আসছে খালি স্থান পূর্ণ করতে।  ঠিক একই রকমভাবে বায়ুমণ্ডলের কোন স্থান সূর্যের কিরণে উত্তপ্ত হয়ে গেলে সেখানকার বাতাস উপরের দিকে উঠতে শুরু করে এবং আমরা বলি সেই স্থানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। অপরপক্ষে পার্শ্ববর্তী স্থান এর বাতাস তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা এবং ভারী হওয়ার কারণে আমরা বলে থাকি সেই স্থানের বাতাসের চাপ বেশী বা উচ্চ। ঠিক জল যেমন উচু জায়গা থেকে নীচু জায়গায় প্রবাহিত হয়, বাতাস ও সেরকম উচ্চচাপ থেকে নিম্ন চাপের দিকে প্রবাহিত হয়। তাই পার্শ্ববর্তী এলাকার ভারি বাতাস বা উচ্চচাপ যুক্ত বাতাস ক্রমশ সেই নিম্নচাপের দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করে, ঝডের সৃষ্টি করে। কিন্তু এ তো গেল সাধারণ ঝড়, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় কিভাবে? আর পৃথিবীর কোন অংশে এই নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়?
     নিরক্ষরেখা ও তার পার্শবর্তী এলাকা যেখানে  
                     ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়                       


আসলে পৃথিবীর ঠিক মাঝখান দিয়ে গিয়েছে নিরক্ষরেখা, আর এই নিরক্ষরেখায় সূর্যের আলো উলম্ব বা সোজা মাটিতে পড়ে, তাই নিরক্ষরেখা ও তার   পার্শ্ববর্তী বাতাস উতপ্ত হয়ে উঠে নিম্নচাপ এর সৃষ্টি করে। অপরপক্ষে মেরু প্রদেশে সূর্যের আলো তীর্যক ভাবে পরে, ফলে এই অঞ্চলের বাতাস তুলনামূলক ভাবে ঠান্ডা ও ভারী থাকে, ফলস্বরূপ দুই মেরু প্রদেশ থেকে উচ্চচাপ যুক্ত বাতাস ক্রমশ নিরক্ষরেখার দিকে ছুটে আসে ঝড়ের সৃষ্টি করে। মানচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে নিরক্ষীয়রেখা ও তার আশেপাশে এই ধরনের নিম্নচাপের ফলে ঘুর্ণি ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
     তাপ সরাসরি নিরক্ষরেখায় পড়ছে, বাতাসের   
               বিক্ষেপণ ও ঘূর্ণি ঝড়ের সৃষ্টি                 

এখন প্রশ্ন হলো, এই ঘূর্ণি কিভাবে সৃষ্টি হয়?
এই ঘূর্ণি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে একমাত্র কারণ হলো পৃথিবীর নিজের ঘূর্ণন। হ্যা , পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে সর্বদা পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরে চলেছে, আর এই ঘূর্ণনের জন্য পৃথিবীর উপরের থাকা কোনো গতিশীল পদার্থের উপর একটি বিশেষ বল প্রয়োগ হয়, পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে Coriolis Force. এই বলের প্রভাবে, উত্তর গোলার্ধ থেকে নিরক্ষীয় রেখার দিকে ছুটে আসা বাতাসের উপরে ডানদিকে বল প্রয়োগ হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে নিরক্ষরেখায় ছুটে আসা বাতাসের উপরে বাঁদিকে বলপ্রয়োগ হয়। এখন উচ্চচাপ যুক্ত বাতাস উত্তর গোলার্ধ থেকে নিরক্ষীয় রেখার দিকে আসার সময় দুটি বল দ্বারা প্রভাবিত হয়। ১) Coriolis Force, যা তাকে ডানদিকে ফেলার চেষ্টা করে আর ২) উচ্চচাপ থেকে নিম্ন নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে কেন্দ্রাতিগ বল।
এই দুই বলের প্রভাবে সেই জায়গায় ঘূর্ণিবাতের সৃষ্টি হয়। উত্তর গোলার্ধে এটি Anticlockwise আর দক্ষিণ গোলার্ধে এটি Clockwise ভাবে ঘুরতে থাকে। এইভাবেই ঘুর্ণি ঝড়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে ।
                 ঘূর্ণি ঝড় উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে
 এই নিম্নচাপ  বঙ্গোপসাগরের মাঝে তৈরি হয়েছে বিগত কিছু দিন ধরে । যা যশ বা ইয়াস নামক ঝড় এর উৎপন্ন করবে ।এই নাম দিয়েছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ওমান । আরবি ভাষায় "যশ বা ইয়াস " কথার অর্থ দুঃখ। এই যশ বা ইয়াস নামটি প্রকৃত পক্ষে আরবি ভাষা। বাংলায় একে যশ বা কোথায় ইয়াস বলে থাকলেও , ইয়াস কথাটি হলো প্রকৃত নাম ইয়াস এর বাংলা উচ্চারণ যশ হয়।