breaking

Wednesday, 12 May 2021

মৃতের ঢের,এক শতাব্দীর আগের দৃশ্য এর প্রতিচ্ছবি বিহারের গঙ্গাতে...

সম্প্রতি আমরা সোশ্যাল মিডিয়া এবং নিউজ দেখতে পাচ্ছি বিহারে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর উপর ১০০ এর বেশি মৃতদেহ ভাসছে কিছু নদীর তীরে আটকে আছে গলা-পচা অবস্থায়। অনুমান করা হচ্ছে এই মৃতদেহগুলি করণা রোগীর এবং এদের পরিবারের কেউ এই মৃতদেহগুলি শেষকৃত্য করতে রাজি হয়নি , দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছে।এই ভাসোমান মৃতদেহটি গঙ্গার তীরে আটকে আছে যা দেখলে নরক দৃশ্যের কম কিছু বলে মনে হবে না।

       স্প্যানিশ ফ্লু।                    নদীতে ভাসমান দেহ

তবে এই দৃশ্য দেখলে এক শতাব্দী আগে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা স্প্যানিশ ফ্লু এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ঠিক একই রকম দৃশ্য ১০০ বছর আগে দেখা গেছিল কিন্তু তাহা বিহারের নয় মধ্যপ্রদেশের নর্মদা নদীর উপর।স্প্যানিশ ফ্লু তে মৃত ব্যক্তিদের দেহ এরকম ভাবেই নর্মদা নদীর তীরে ভেসে থাকতে দেখা গেছিল।

জাতীয় তথ্যশালা ( NATIONAL ARCHIVES) এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী সেই সময়ের সম্বন্ধে জানা যায়। এই রিপোর্টটি নাম দিয়েছিল "  THE INFLUENZA EPIDEMIC OF 1918 IN INDIA"

প্রকৃতপক্ষে রিপোর্টে কি তথ্য দিচ্ছে..!!
এই রিপোর্ট বলা হয়েছে "নর্মদা নদীতে কাল ঘাট বলে একটি জায়গা থেকে ধর্মপুরী পর্যন্ত নদীতে মৃতদেহের জন্য নিকাশি ব্যবস্থা এতটাই জঘন্য হয়ে উঠেছিল যে নৌকা নিয়ে পারাপার দুস্কর হয়ে উঠেছিল, মৃত্যুর পরিমাণ এতই লম্বা ছিল যে তাদের শেষকৃত্য করার লোকের অভাব ছিল, কোথাও হয়তো পুরো পরিবার মারা গেছে এবং তাদের শেষকৃত্য করার জন্য যে এসেছে সেও হয়তো এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃতদেহের শেষকৃত্য করা প্রায় সেই সময় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল যার ফলস্বরূপ অধিকাংশ মৃতদেহ শেষকৃত্য করার বদলে নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল"

মৃতদেহগুলি নদীর প্রবাহ গতি কম এর ফলে ধীরে ধীরে তাহা নদীর পাড়ে জমা হতে থাকে ও পচতে আরম্ভ করে যা আশেপাশের বায়ু দূষিত করে এক নোংরা আবহাওয়া সৃষ্টি করে। কাক শকুন তাদের খাদ্যের বিরাট রসদ পেয়ে যায়। এমনকি দৈনন্দিন নদী পারাপার করা নৌকা চালকদের কাছে জানা যায়, এই মৃতদেহ প্রায় সব সময় তাদের গতিপথে বাধার সৃষ্টি করছিল।

মৃতদেহগুলোকে উদ্ধার করে শেষকৃত্য করার লোক এবং সরঞ্জাম দুটোরই অভাব ছিল। ফলে মৃতদেহগুলোকে নদীর স্রোতের সাথে ভাসিয়ে দিয়ে নদী পরিষ্কার করার চেষ্টা চালানো হয়।

এই রিপোর্টে উল্লেখিত আছে আশেপাশের এলাকার চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম এতটাই অভাব ছিল যে মানুষকে পড়ে পড়ে মরা ছাড়া আর কোন গতি ছিল না। রোগে ডাক্তাররা সংক্রমিত, ওষুধ এর অভাব আরো গুরুতর করে তুলেছিল। পার্শ্ববর্তী এলাকা কজরি ,কাকরদা ,কালঘাট এলাকাগুলিতে দৈনন্দিন হাজার জন করে সংক্রমিত হচ্ছিল। 
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণের হার এর তুলনায় কয়েক হাজার গুণ বেশি সাথে তখন এর তুলনায় এখনের স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনেক উন্নত কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রায় একই দৃশ্য আমাদের সামনে ভেসে উঠছে যা ১০০ বছর আগের ঘটনা এবং বর্তমানের ঘটনার তার প্রতিফলন। বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের পরিকাঠামো এর সাথে আমাদের অবস্থাকে পরিদর্শিত করছে সারা বিশ্বের সামনে।