breaking

Sunday, 9 May 2021

জানা-অজানা রবীন্দ্রনাথ

"সেদিন আমার জন্মদিন।
প্রভাতের প্রণাম লইয়া
উদয়দিগন্ত-পানে মেলিলাম আঁখি,
দেখিলাম সদ্যস্নাত উষা
আঁকি দিল আলোকচন্দনলেখা
হিমাদ্রির হিমশুভ্র পেলব ললাটে।"

কবিগুরুর জন্ম জয়ন্তীতে তাঁর জীবনের কিছু অল্প জানা বিষয় নিয়ে গুটিকয় কথা আলোচনা করতে চলেছি। বলাবাহুল্য, তাঁর প্রতি আমার এক ক্ষুদ্র নৈবেদ্য....

লেখার শুরু ও দ্বিরেফ...
তিনি তো কবিগুরু, তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির সংখ্যা অজস্র। কিন্তু তার এই লেখার পথ চলা কবে থেকে? তাঁর প্রথম কাব্য গুরু ছিলেন ভাগ্নে জ্যোতি:প্রকাশ। ভাগ্নে টি তাঁর থেকে বয়সে খানিকটা বড়ই ছিল। রবির বয়স তখন সাত কি আট, ভাগ্নে তাকে শিখিয়ে দিল চোদ্দ অক্ষরের ছন্দে কবিতা লেখার কৌশল।
ছাপার অক্ষরে যে নিজের লেখা ছাপানো যেতে পারে সে কথা ভাবতেও পারেনি রবি। সেরেস্তা দের কাছ থেকে চেয়ে নিলেন একটা নীল রংয়ের ফুলস্কেপ কাগজের খাতা। সেই খাতাতেই পেন্সিল দিয়ে নিজেই টেনে নিলেন আঁকাবাঁকা অসমান লাইন।
আট বছরের শিশু হাতে ওই খাতাতেই চলল বড় বড় অক্ষরে পদ্য লেখার কাজ। খাতাটি পকেটে ভরে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন শ্রোতার খোঁজে। ভাগ্নে জ্যোতি:প্রকাশ তাঁর ছাত্রের কারসাজি দেখাবার জন্য নিজেও জোগাড় করতেন শ্রোতা।
একবার পদ্মফুল নিয়ে কবিতা লেখার সময়, মধুপানরত ভ্রমর কে বোঝাতে, রবি ভ্রমরের পরিবর্তে ব্যবহার করলেন একটি কল্পিত শব্দ --“দ্বিরেফ”। তাঁর মনে হয়েছিল, দ্বিরেফ ব্যবহার করলে কবিতার ওজন বাড়বে।
একবার “ন্যাশনাল পেপার” কাগজের সম্পাদক কে কবিতাটা শোনানো হলে “দ্বিরেফ” শব্দ নিয়ে বিস্তর হাসাহাসি চলেছিল। এতে শিশুকবির আত্মবিশ্বাস এতোটুকু চিড় ধরেনি, বরং শ্রোতার তালিকা থেকে সম্পাদক মহাশয় এর নামটাই কাটা পড়েছিল।
প্রথম রচনা ও আত্মপ্রকাশ
জ্ঞানাঙ্কুর” নামেে একটি পত্রিকাতেই প্রথম প্রকাশিত হয়় কবিগুরুর প্রথম কবিতা। তাঁর প্রথম  গদ্যের ও আত্মপ্রকাশ ঘটে এই পত্রিকাতে। যদিও এই গদ্যটি কোন উপন্যাস বা গল্প ছিলনা, ছিল নিছকই একটিি গ্রন্থ সমালোচনা।
সেই সময়ে প্রকাশিত “ভুবনমোহিনী প্রতিভা” নামের একটি কাব্যগ্রন্থ পাঠক মহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল। বইটি ভুবনমোহিনী নামে কোন এক মহিলা কবির। এই গ্রন্থের সাথে সেই কবির আরও দুটি কাব্যগ্রন্থ “দুঃখসঙ্গিনী” ও “অবসর সরোজিনী”--এই তিনটি গ্রন্থের সমালোচনা ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
যে রোগে ভুগতন রবীন্দ্রনাথ
একের পর এক প্রিয়জনদের হারিয়েও কবি যেমন অবিচল ছিলেন তাতে তাঁর মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় মেলে। মানসিক দিক থেকে তিনি যেমন ছিলেন দৃঢ় তেমনি শারীরিক দিক থেকেও তিনি ছিলেন সক্ষম।
কিন্তু কবি কেউ সম্মুখীন হতে হয়েছিল কঠিন ব্যধির। পত্নী মৃণালিনীর অকাল বিদায়ের পর থেকেই স্বাস্থ্য হারাতে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রপুত্র রথীন্দ্রনাথ এর জীবনীভাষ্য থেকে জানা যায় ছিয়াত্তর বছর অবধি কবি কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগেন নি। ১৯৩২ সাল থেকে ধীরে ধীরে রুগ্ন হতে শুরু করেন, এতটাই অসুস্থ হন যে, ১৯৩৭ সালে তিনি কোমায় পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। কবি পরে খুদা করে বলেছিলেন, যমরাজের দুয়ার থেকে নাকি তিনি ফিরে এসেছেন। ধীরে ধীরে তার ত্বক পান্ডুর হয়ে যায়, মাথার চুল হালকা হতে থাকে। যে রোগে তিনি ভুগছিলেন তার বাংলা নাম, অর্শ বা বিসর্প। এলোপ্যাথিক ভাষায় যাকে পাইলস বা হেমোরয়েডস ও বলা হয়।
রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ কিক কি রোগে হয়েছিল তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। ১৯৪০ সালে তিনি সর্বশেষ অসুস্থতায় পড়েন, এই অসুস্থতা থেকে তিনি আর ফিরে আসেননি।