গত শুক্রবার ফিফার বাৎসরিক সন্মেলনে , সৌদি আরব বিশ্বকাপ চার বছরের বদলে দুই বছর অন্তর করার প্রস্তাব রাখেন। এই প্রস্তাব কতটা বাস্তব যোগ্য এবং আর্থিক দিক থেকে লাভবান কিনা তার উপর একটি গবেষণা করা হবে বলে ঠিক করা হয় এবং এর উপর ভোট গ্রহণ হয় , ফিফার ২১১ জন মেম্বার দেশের মধ্যে ১৬৬ টি মেম্বার দেশ এর সপক্ষে এবং ২২ টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দান করে ।
এই গবেষণার নথিপত্র অনুযায়ী যদি বিশ্বকাপ দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত করা সম্ভব এবং তাহা কোনো প্রকার বাঁধার সৃষ্টি করবে না, তবে হয়তো সামনের বিশ্বকাপ এর জন্য চার বছর অপেক্ষা নাও করতে হতে পারে।
তবে সৌদি আরব কি প্রথম দেশ এই প্রস্তাব আনার ক্ষেত্রে?
সেক্ষেত্রে উত্তর হবে একদমই নয়, ১৯৯৯ সালে প্রাক্তন ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার এরকম একটি প্রস্তাব রেখে ছিল , তবে সেই সময় এই প্রস্তাবের বিপুল প্রতিবাদ দেখা গিয়েছিল।
তার বক্তব্য ছিল " বিশ্বকাপ দুই বছর অন্তর করলে দেশীয় দল গুলো আরো পাকাপোক্ত হবে , তাছাড়া একটি মহাদেশকে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে না, বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত করতে এবং ফুটবল প্রেমীদের অপেক্ষা কমবে"
তবে প্রবল প্রতিবাদের ফলে জল বেশি দূরে এগোতে পারে নি।
অনেকের আশঙ্খা
এই সিদ্ধান্ত খেলার জনপ্রিয়তা কমিয়ে দেবে ...
কথাটা একবারেই ফেলে দেওয়ার মতো না, চার বছর ধরে একটি দেশ নিজের দলকে তৈরি করে বিশ্বকাপের জন্য, বহু ফুটবল প্রেমী চার বছর অধীর আগ্রহে বসে থাকে বিশ্বকাপ উপভোগ করার জন্য, এখন ইহা দুই বছর অন্তর হলে ইহার জনপ্রিয়তা এবং মূল্য কমে যাবে নাতো?
প্রশ্নটা আমাদের যথোপযুক্ত মনে হলেও এর সততা বিচার এর প্রয়োজন
দুই বছর অন্তর বিশ্বকাপ ফিফার ঝুলিতে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করলেও ইহা অন্য আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট গুলির অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
প্রথমত ইউরো(EURO) ইউরোপিয়ান টুরানামেট যা বিশ্বকাপের ঠিক দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হয়, এক্ষেত্রে অনেক দল আছে যারা ইউরোপ এবং বিশ্বকাপ দুটোই প্রতিনিয়ত খেলে আসছে,তাদের পক্ষে দুটো টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি একই বছরে সম্ভব হবে কিনা বলা মুশকিল, তাছাড়া অসুবিধা হবে ইউরো চালানো UEFA কর্তৃপক্ষের পক্ষে খেলার সময় নির্ধারণ করার। কারণ একই সাথে দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট চলা অসম্ভব।
এছাড়া কোপা আমেরিকা, এশিয়ান গেমস ,আফ্রিকান কাপ এবং নানা দেশের মধ্যে ফ্রেন্ডলী খেলা গুলি বিঘ্নিত হবে।
২০২৮ সাল থেকে ঠিক করা হয়েছে বিশ্বকাপ ৩২ দলের বদলে ৪৮ দলের অনুষ্ঠিত হতে পারে। এখন সুদূর ভবিষ্যতের কথা না হয় বাদই দিলাম, ধরা যাক ৩২ দল থাকলো, সেক্ষেত্রে দুই বছর এর মধ্যে এত গুলো দল এর নির্বাচন যেখানে কিনা প্রতিটা মহাদেশের প্রতিটা দল অংশগ্রহণ করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য।সব দেশ চাইবে অংশ গ্রহণ করতে । এখন নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বকাপ হওয়ার পরের বছর তাহলে নির্বাচনী খেলা শুরু করতে হবে পরের বিশ্বকাপের জন্য এবং সেই সময় চলাকালীন যে কোন ক্লাব ফুটবল, আন্তর্জাতিক খেলা সবকিছু মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। খেলোয়াড়দের মধ্যে এরকম খেলা ক্রমাগত চলার চাপ সৃষ্টি হবে এবং হয়তো এতে তাদের খেলার অবনতিও দেখা যেতে পারে।
সুতরাং বিশ্বকাপ দু'বছর অন্তর অন্তর শুনতে যতটা মধুর লাগলেও বাস্তবায়িত করাটা হয়তো ততটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে । এখন অন্তিম সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আমাদের মত ফুটবলপ্রেমীদের আর কিছুই করার নেই।