বাংলা, ভারত তথা প্রাচ্যের শহীদ পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের বিষয়টি কে এই উপলক্ষে নির্বাচন করার পেছনে একদিকে ছিল বক্তা অমর্ত্য সেনের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, অন্যদিকে ছিল সত্যজিৎ রায়ের জীবন দর্শন সম্পর্কে তার গভীর মূল্যায়ন। উদার সহিষ্ণু আন্তর্জাতিকতার দর্শন। তার মূলে রয়েছে আপন সংস্কৃতির গভীর চর্চা ও অনুশীলনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব সংস্কৃতির সহিত সংযোগ সাধন এবং সেই সংযোগ হতে রসদ সংগ্রহ করে আপন ভাবনা ও সৃষ্টি কে আবার বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া। ঘর ও বাইরে নিরন্তর আদান-প্রদানের মাধ্যমে যে সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি গত দুই শতাব্দী বাঙালি তার ধারক এবং বাহক।
সত্যজিৎ রায় নিজে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন। সারা জীবন সৃষ্টিতে কথায় ,লেখায় তিনি নিজেকে প্রসারিত বিশ্বের নাগরিক হিসেবে দেখেছেন। ভারতীয় তথা বাঙালির জীবন ঐতিহ্য সানিয়া আপন চলচ্চিত্র গড়ে তুলবার সঙ্গে সঙ্গে সেই দৃষ্টিকে বিশ্বের দরবারে হাজির করবার সুযোগ ও তার নিকট অত্যন্ত মূল্যবান ছিল।
১৯৮২ সালে এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, পথের পাঁচালীর দীর্ঘ নির্মাণ পর্বের মধ্যেই যখন অপ্রত্যাশিতভাবে নিউ ইয়র্কের একটি ভবিষ্যৎ প্রদর্শনের তাহা দেখিবার অগ্রিম প্রস্তাব আসে তখন তার মন নেচে উঠেছিল। এবং 991 সালে অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান হসপিটালে শয্যাশায়ী অবস্থায় এই পথের পাঁচালীর জন্যই। এই প্রথম কোন চলচ্চিত্রে বাংলার সৌন্দর্য তাকে এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলে ছিল যা বাঙালি নিজেও দেখে অভিভূত হয়েছিল।
পথের পাঁচালী, গুপী গাইন বাঘা বাইন, প্রফেসর শঙ্কু ফেলুদা এই সমস্ত নিয়েই একটি ইউনিভার্স তৈরি করেছিলেন আমাদের প্রিয় সত্যজিৎ রায়। আজ সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবর্ষ পূর্ণ হল । তার লেখা তার চিত্র তার সৃষ্টি সবই যেন বর্তমানের বাঙালির কাছে এক অতীতের সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো। এক অমূল্য সম্পদ পুনরায় সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব।
বাঙালি এখন বিভিন্ন বিষয়ে তুচ্ছতার সাধক, বড় করিয়া কিছু ভাবার ক্ষমতা জন্য হারিয়েছে। ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে কিন্তু তাহা ব্যতিক্রমী। তার জীবনের শেষ ছবি আগন্তুক এমন মোহন মিত্রের কণ্ঠস্বরে তিনি তাঁহার কঠিন রায় শুনিয়ে দিয়ে গেছে। তবে এটা সত্য যে ,শেষ পর্যন্ত তিনি মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারান নি।
এই মহান বাঙালির জন্ম শতবর্ষে তাকে জানাই প্রণাম।