প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সূত্র জানাচ্ছে, লাল বাহাদুর মৃত্যু রহস্যের সঙ্গে আমাদের এমন অনেক সত্যের মুখোমুখি হতে হবে যাতে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কই নষ্ট হয়ে যাবে!
শাস্ত্রীজির মৃত্যু সম্পর্কে কী জানে? জানে, ১৯৬৬ সালের ১১ জানুয়ারি লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। সরকারি রিপোর্ট অনুসারে হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই শাস্ত্রীজি ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর স্ত্রী ললিতা শাস্ত্রীও সে সময় সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই বিবৃতিটিই দিয়েছিলেন। কিন্তু পুরো বিষয়টি জলের মতো স্বচ্ছ নয় মোটেই। গভীর এক ষড়যন্ত্র ঘিরে রয়েছে শাস্ত্রী মৃত্যুর রিপোর্টকে কেন্দ্র করে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, রাশিয়া তাদের কাছে শাস্ত্রীজির কোন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেয়নি। কিন্তু ইতিহাস বলছে অন্য কথা। লালবাহাদুরের ব্যক্তিগত ডাক্তার আর এন চৌঘা ও কিছু রাশিয়ান ডাক্তার মিলে শাস্ত্রীজির ময়নাতদন্ত করেছিলেন। তাহলে সেই রিপোর্টাই বা গেল কোথায়!
লাপতা!
এরকম অনেককিছুই আছে যা ধোঁয়াশায় ভরা। এই প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করি। যেখানে বলা হয়েছে, নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের নতুন মোড়। তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনার ২০ বছর পর তোলা একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে। ১৯৬৬-র ইন্দো পাক শান্তি বৈঠকে যোগ দিতে তাসখন্দ গিয়ে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। এই সফরে লালবাহাদুরের একটি ছবির পেছন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। নেতাজির ছবির সঙ্গে ওই ব্যক্তির মুখে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য রয়েছে বলে তাঁর ৬২ পাতার রিপোর্টে বলেছেন ফেস ম্যাপিং এক্সপার্ট নেইল মিলার। মুখের ধরন, কান, চোখ, কপাল, নাক, ঠোট এবং চিবুক সর্বত্রই দুটি মুখের মধ্যে মিল যথেষ্ট বেশি। এই সামঞ্জস্য থেকে দুজন একই ব্যক্তি, এই সিদ্ধান্তে আসা যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ হাইকোর্ট ও আন্তর্জাতিক আদালতে বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার বিশেষজ্ঞের মতামত দেওয়া মিলার এই ছবিটি নিয়ে এক বছর কাজ করেছেন। তবে চুল উঠে মাথার সামনেটা ফাঁকা হয়ে যাওয়া নেতাজির যে ছবি দেখে আমরা অভ্যস্ত, তার সঙ্গে কিছুটা অমিল রয়েছে চুলে ঢাকা এই ব্যক্তির। কিন্তু ছদ্মবেশ ধারণের জন্য তা পরচুল হতেই পারে বলে জানানো হয়েছে।
লালবাহাদুরের ছবির পেছনে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। নেতাজির সঙ্গে ওই ব্যক্তির অত্যন্ত সাদৃশ্য রয়েছে বলে রিপোর্টে বলেছেন ফেস ম্যাপিং এক্সপার্ট মিলার।
মিশন নেতাজির প্রাক্তন সদস্য ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডাচ নাগরিক সিদ্ধার্থ সৎভাই এর নির্দেশেই এই ফেস ম্যাপিং এর কাজ করা হয়। ৩৬ বছরের এই সফটওয়্যার প্রফেশনালকে আরো কয়েকজন নেতাজি গবেষক ও কলকাতায় নেতাজি অনুগামীরা মিলারের পারিশ্রমিকের অর্থ চাঁদা তুলে দেন। প্রথমে একজন ভারতীয় বিশেষজ্ঞকে দিয়েই এই কাজ করানো হবে বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য কোন ভারতীয় ফেস ম্যাপিং বিশেষজ্ঞ এই কাজে রাজি হন না। শেষে ইংল্যান্ডের নেইল মিলারকেই এই কাজের ভার দেওয়া হয়। নেইল মিলারের রিপোর্ট কোনরকম রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায়, সেই রিপোর্ট আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন নেতাজি গবেষকরা।
রিপোর্ট হাতে পেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে বিদেশমন্ত্রকের কাছে তাসখন্দের ওই ব্যক্তির পরিচয় জানার জন্য আবেদন করেন নেতাজি বিশেষজ্ঞরা। এই ছবি সত্যি প্রমাণিত হলে তা ১৯৪৫ সালে তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তত্তও খারিজ করে দেবে। পাশাপাশি,১৯৫০-এ জোসেফ স্ট্যালিন এর হাতে নেতাজি খুন হন বলে যে দাবি অনেকে করে থাকেন, তাও মিথ্যে প্রমাণিত হবে। উল্লেখ্য, তাসখন্দ সফরের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় লালবাহাদুর এর। মৃত্যুর আগেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় লালবাহাদুরের নাতি সঞ্জয়নাথ সিং এর। সেই সময়ে নয় বছরের বালক সঞ্জয় জানিয়েছিলেন, লাল বাহাদুর দেশে ফিরে কোনও গোপন কথা সবাইকে জানিয়ে দেবেন বলেছিলেন।
কী সেই কথা? সত্যিই কি তাসখন্দে নেতাজি কে দেখেছিলেন লাল বাহাদুর? সত্যিই কি তাঁর আত্মীয় নেতাজির সঙ্গে কথা বলেছিলেন? ফেস ম্যাপিং রিপোর্ট নতুন করে প্রশ্ন জাগিয়ে দিয়েছে।