হ্যাঁ , ঠিকই পড়েছেন যা আজও বিশ্বাস হয় না, কিন্তু আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ১৯২৫ সালে এরকম অসম্ভবকে নিজের পরীক্ষাগারে আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন ২৮ বছরের পদার্থবিদ প্যাট্রিক ব্ল্যাককেট। যদিও তিনি লোহা নয়, নাইট্রোজেনকে অক্সিজেনের রূপান্তরিত করেছিলেন। কিন্তু এ নিয়ে গত ৭০ বছর ধরে ভুল ধারণা ছিল, যে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড এই যুগান্তকারী ঘটনার প্রথম সাক্ষী ছিলেন।
আসলে ছয় বছর আগে ১৯১৯ সালে একই পরীক্ষা করেছিলেন রাদারফোর্ড। কিন্তু কি হয়েছিল সেদিন ? আর নাইট্রোজেনই বা, অক্সিজেনে রূপান্তরিত হল কিভাবে?
প্যাট্রিক ব্ল্যাককেট
আমাদের সকলেরই জানা ১৯১১ সালের রাদারফোর্ডের সেই বিখ্যাত স্বর্ণ পত্র পরীক্ষার কথা। যে পরীক্ষার মাধ্যমে পদার্থবিদ্যার সেই সময়কার সবচেয়ে ছোট অভেদ্য অংশ পরমাণুর কথা জানা যায়। রাদারফোর্ড এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম দেখিয়েছিলেন যে পরমাণুর কেন্দ্রে রয়েছে প্রচন্ড শক্তিশালী ধনাত্মক আধান এর একটি পিণ্ড, নাম দেন নিউক্লিয়াস, আর এই নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঋণাত্মক আধান গ্রস্ত, তুলনামূলকভাবে অনেক হালকা ইলেকট্রন। কিন্তু কেন্দ্রীভূত নিউক্লিয়াস কি দিয়ে তৈরি তার সম্পর্কে রাদারফোর্ড প্রচন্ড কৌতুহলী হয়ে পড়েন, এই সম্পর্কে ১৯১৭ সালে একটি চিঠি ও লিখেছিলেন নীলস বোর কে। নিউক্লিয়াসের প্রকৃতি সম্পর্কে জানার জন্য ১৯১৯ সালে রাদারফোর্ড করলেন, আরেক যুগান্তকারী পরীক্ষা, তিনি নাইট্রোজেনকে আলফা পর্টিকেল দিয়ে ধাক্কা মেরে দেখলেন নাইট্রোজেনের নিউক্লিয়াস থেকে বেরিয়ে আসছে ধনাত্মক আধান গ্রস্ত একটি ছোট্ট কণা যার নাম তিনি দিয়েছিলেন প্রোটন। কিন্তু কি হল সেই নাইট্রোজেনের, তার সম্পর্কে রাদারফোর্ড কিছুই লেখেননি ।ঠিক কিছুদিন পরেই, তার ছাত্র প্যাট্রিক ব্ল্যাককেট রাদারফোর্ডের ল্যাবে সেই একই পরীক্ষা করলেন, টানা তিন বছর ধরে ১৯২১ সাল থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় 23 হাজার ফটো তুললেন ৪লক্ষ কনার। ব্ল্যাককেট দেখেন আলফা পর্টিকেল নাইট্রোজেন এর সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে এবং সমসাময়িক সময়ে প্রোটন নির্গত হচ্ছে , তিনি আরও লক্ষ্য করেন যে পরীক্ষাগারে নাইট্রোজেনের থেকে তুলনামূলক ভারী কণার সৃষ্টি হয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে অক্সিজেন মৌল।
আসলে বিভিন্ন মৌলের মধ্যে একটি মূল পার্থক্য হল নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যার। যদি নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যার পরিবর্তন ঘটে তাহলে মৌলটি প্রকৃতপক্ষে অন্য মৌলে রূপান্তরিত হয়। আলফা পার্টিকেল হলো প্রকৃতপক্ষে হিলিয়াম কনা, যার নিউক্লিয়াসে ২ প্রোটন থাকে, আর নাইট্রোজেনের নিউক্লিয়াসে ৭ এবং অক্সিজেনের নিউক্লিয়াসে ৮ প্রোটন থাকে। তাই আলফা পর্টিকেল যখন নাইট্রোজেনের নিউক্লিয়াস এর সাথে যুক্ত হয় এবং একটি প্রোটন বেরিয়ে আসে, অবশিষ্ট মৌলের মধ্যে ৮ টি প্রোটন থেকে যায়। আর এই অবশিষ্ট মৌলটি হল অক্সিজেনের মৌল আর এই ভাবেই নাইট্রোজেন থেকে অক্সিজেনে রূপান্তর এর মধ্যে দিয়ে এক মৌল থেকে অন্য মৌলের রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়।
পরবর্তীকালে ১৯২৫ সালে জার্নাল অফ কেমিক্যাল সোসাইটি নামক পত্রিকায় প্যাট্রিক ব্ল্যাককেট এই অভাবনীয় আবিষ্কার প্রকাশিত হয়েছিল।