ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বিধানপরিষদ রাজ্য আইনসভার একটি অঙ্গ যেটি আমরা মানুষের অ্যাপেন্ডিক্স এর সাথে তুলনা করতে পারি যা কেটে ফেললেও মানুষ সুস্থ সবল থাকে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ১৬৯(১) নং ধারাতে বলাই আছে বিধান পরিষদ সৃষ্টি বা বিলুপ্তির কথা বর্তমানে ৬ টি রাজ্যে এখনো বিধানপরিষদ বর্তমান।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা বিলুপ্ত হয়েছিল ১৯৬৯ সালের যুক্ত ফ্রন্ট আমলে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুনর্গঠন এর আবার সুর তুলেছে।
কিন্তু কেন ?সত্যিই কি বঙ্গে বিধান পরিষদের প্রয়োজন?
বর্তমানে এই বিধাশপরিষদ বন্ধ করার জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার উঠে পড়ে লেগেছে আর সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদ পূনর্গঠনের সুর তুলছে । এবার এই বিধানপরিষদ সৃষ্টির বিষয়ে কি লাভ বাকি ক্ষতি আছে তার দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক..
বিধান পরিষদের সদস্যরা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত এবং রাজ্যপাল দ্বারা মনোনীত। প্রতি বিধান পরিষদের সদস্য সংখ্যা আইনসভার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না এবং ৪০ কম হবে না। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের এর সদস্য সংখ্যা ৯৮ এর বেশি হবে না। প্রতি সদস্যের বেতন 50 হাজার টাকা সুতরাং ৯৮ জন সদস্যের প্রতি মাসে ৪৯০০০০০ টাকা এবং প্রতি বছরে ৫ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা ও ৬ বছরের ৩৫২৮০০০০০ অর্থাৎ ৩৫ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা খরচ এছাড়াও তাদের পেনশন স্বাস্থ্য বীমা যাতায়াত অন্যান্য খরচ বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে প্রচুর টাকার ব্যয় হয় যা রাজ্যের অন্যদিকে আঘাত হানে। এছাড়া কোন বিল পাসের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা নগণ্য, দুই সভায় বিল পাস করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সময়ের অপচয় হয়।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন করা যেতেই পারে তাহলে রাজ্য পরিষদ প্রয়োজনীয়তা কি?
রাজ্যসভা ও বিধান পরিষদের একটা বৃহৎ অংশের পার্থক্য আছে। রাজ্যসভার সদস্য অন্য রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন দল থেকে নির্বাচিত হয় যা শাসকদলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে সক্ষম। শুধু পার্থ অর্থবিল ছাড়া সমস্ত ক্ষেত্রে রাজ্যসভা মূল্যবান ভূমিকা গ্রহণ করে। কিন্তু বিধান পরিষদের সেই রাজ্য বিধান পরিষদ নির্বাচিত সদস্য ও রাজ্যপাল মনোনীত হয় সুতরাং এক্ষেত্রে দেখা যায় শাসকদলের চোখে আঙ্গুল দেওয়ার মানুষের সদস্য সংখ্যা নগন্য।
সবকিছুরই একটা ভালো দিক থাকে সেরকম এর একটা ভালো দিক সেটা হল নির্বাচিত মনোনীত সদস্যরা বিভিন্ন বিভাগ থেকে আসে, তারা মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দান করে যা রাজ্যের ক্ষেত্রে উপকারী।
কিন্তু বিধান পরিষদ বিলুপ্ত হওয়ার ইতিহাস কি?
১৯৬৯ সালে বিধান পরিষদ বিলুপ্ত করার বিলটি তোলা হয়েছিল, কেন্দ্রে ছিল কংগ্রেস সরকার এবং রাজ্যে বিধান পরিষদে বেশিরভাগই সদস্য ছিল কংগ্রেসের। সিপিআইএম বিলটি তুলেছিল এবং যুক্তফ্রন্ট সরকারএর কংগ্রেস সদস্যদের সমস্যার মধ্যে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। তবে দেখা গেল কেন্দ্র এর বিরোধিতা না করে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অবসান মেনে নেয় এবং যার ফলস্বরূপ বিধান পরিষদ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এখন পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদ পুনর্গঠনের এর ক্ষেত্রে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে যে সমস্ত সদস্যরা এইবার ভোটে হেরে গেছে বা যারা সরকারের সেরকম কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই তাদেরকে এই বিধান পরিষদ সদস্য করা হবে। এখন কথা হল সাধারণের নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রতিনিধি আবার বিধান পরিষদের গিয়ে বসলে ব্যাপারটা মাথা ঘুরিয়ে কান ধরার মত হয়ে যাবে, যে একভাবে কোন পদ পায়নি তাকে অন্যভাবে তা দেওয়া হবে।এখন অতিরিক্ত ব্যয় এর সাথে সাথে রাজ্য আইন পাশের ক্ষেত্রেও সময় অপচয় সবকিছু মিলিয়ে বিধান পরিষদের প্রয়োজনীয়তা টা ঠিক জনগণের সামনে পরিস্কার হয়ে উঠেছে না। এই প্রয়োজনীয়তা ধোঁয়াশার মধ্যে গণতন্ত্রের মর্যাদাটার ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।