breaking

Thursday, 10 June 2021

চীন বিপদের সন্মুখীন, দেশের জন্মহার নিন্মমুখী হওয়ায়..


সম্প্রতি চীনের জনসংখ্যা সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে এবং এই জনসংখ্যা সমীক্ষা থেকে একটা কথাই বোঝা যাচ্ছে জনসংখ্যা নিয়ে চীনের শাসকদের টানাপোড়নের শেষ নেই। আশির দশকে জনবিস্ফোরণ সামলাতে চীন দেশের কর্তৃপক্ষরা এক সন্তান নীতি ঘোষণা করে। জন্মনিয়ন্ত্রণের সেই জবরদস্তি দেশে বিশেষত শহরাঞ্চলে প্রবল সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করেছিল। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে খাদ্য সংকট বা বাসস্থান সংকট অন্য কোনো ভাবনা চিন্তা থেকে থাকলেও জনসংখ্যা কমানোর চেষ্টা দেশের জন্য, তা  গুরুতর গোলযোগ ঘটায় বিশেষত  বয়স বিন্যাসে বয়স্কদের অনুপাত ত্বরান্বিত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে তরুণ জনসংখ্যা , একটি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা হিসেবে দেশের তরুণ ও বয়স্ক  অনুপাত বিঘ্নিত হচ্ছে।
২০১৬ সালে পূর্বের এক সন্তান নীতি কে ত্যাগ করে চীন দেশ দুই সন্তান নীতি গ্রহণ করে। বছর পাঁচেক যেতে না যেতেই তাহা পরিবর্তন করে তিন সন্তান নীতি গ্রহণ করে। এত দ্রুত সিদ্বান্ত বদল কারণ খতিয়ে দেখতে গেলে চোখ রাখতে হবে আশির দশকে , জন সংখ্যা বিস্ফোরণ আটকাতে এক সন্তাননীতি অনেকটা হুমকির মতো চাপিয়ে দেওয়া  হয়েছিল যা অমান্য করলে আইনত ধারায় দণ্ডিত করা হবে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য নতুন  তিন সন্তান নীতি অনেকটা আলগা । চীন কর্তৃপক্ষ দম্পতিদের আহ্বান জানাচ্ছে দুই বা তিন সন্তান ধারণ করতো।
দুই সন্তান নীতি চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে তেমন দাগ কাটে নি তিন সন্তান নীতি ও তেমন দাগ কাটবে বলে মনে হয়না। তাহার কারণ এক কথাই অর্থনীতি। গত তিন দশকে চীনে শিশুদের শিক্ষা এবং বয়স্কদের পরিচর্যা করার খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনদেশ অর্থনীতির দিক থেকে ১৫ ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি হলেও দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয় সুতরাং তাদের পক্ষে একটার অধিক বাচ্চাকে লালন পালন করা একরকম অসাধ্য ব্যাপার। এছাড়া বিগত 40 বছরে চীনের শিল্পায়ন ও নগরায়ন এবং মানুষের দৈনিক জীবনযাপনের যে পরিবর্তন হয়েছে তা মানুষের চিন্তাভাবনাকে এক সন্তানের অধিক ভাবতে দেয় না,  বিগত ৪০ বছরে এই এক সন্তান নীতি প্রভাব খুব গুরুতর ভাবে পড়বে চীনের ওপর, তা শাসকদল এইবারের সমীক্ষাতে বুঝতে পেরেছে।
চীন দেশকে পৃথিবীর কারখানা বলে অভিহিত করা হয় কারণ চীনের খুবই কম টাকায় মজুর পাওয়া যায়   এবং চীন দেশের নানা রকম কোন ছাড় বা যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কারখানা চীন দেশে তৈরি করেছে।
এছাড়াও পৃথিবীর সামরিক ক্ষমতার দিক থেকে চীন প্রথম স্থান অধিকার করেছে সম্প্রতি এক সমীক্ষা অনুযায়ী। এখন সেনাবাহিনী হোক বা কারখানার মজুর প্রতি ক্ষেত্রেই যেটা প্রধান প্রয়োজন সেটি হল বল অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
গতবছর চিনে ১.৫৬৫ কোটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল কিন্তু এবছর জন্মগ্রহণ করেছে ১.২ কোটি অর্থাৎ প্রায় ১৮% কমেছে পূর্বের তুলনায়।
এর কারণ একটাই জন্ম বৃদ্ধির হার, কোন দেশের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান থাকতে গেলে সেই দেশের জন্ম বৃদ্ধির হার ২.১ হওয়া উচিত অর্থাৎ গড় হিসেবে একটি নারী তার সারা জীবনকালে ২.১ টি সন্তান প্রসব করবে কিন্তু চীনের এই জন্মহার ১.৩।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও আশঙ্কা করছে চীনের জনসংখ্যা 2026 সাল থেকে কমা শুরু করবে।
বর্তমানে চিনে কর্মরত জনসংখ্যা অর্থাৎ ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা ৮৯.৪৩ কোটি , জনসংখ্যার ৬৩.৩৫ শতাংশ যা ২০১০ সাল থেকে প্রায় ৬.৭ শতাংশ কমেছে। এবং ৬০ বছর ঊর্ধ্বে বয়সী লোকের পরিমাণ প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছে পূর্বের সমীক্ষা অনুযায়ী।
চীনের শাসকদের টনক নড়লোও তাদের এই তিন সন্তান নীতি জনসংখ্যা নিন্মমুখী এই সমস্যাকে সমাধান করতে পারবে কিনা তার সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।