breaking

Friday, 18 June 2021

দল-বদলের খেলায় মূল্যহীন অ্যান্টি ডিফেকশান আইন....!!

 “দল বদল”-কথাটি মাথায় আসলে সেই ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পরের কাহিনী মনে পড়ে যায়, যেকোন দল ভেঙ্গে যে কেউ এসে হাজির হচ্ছিল তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরে। আবার সেই দল ভাঙার সুর উঠলো  গত লোকসভা  এবং বিধানসভা ভোটের আগে। যার সাক্ষী  পুরো    পশ্চিমবঙ্গ । অনেকে বিজেপি শিবিরের পাড়ি দিয়েছিল গোষ্ঠীর মত দ্বন্দ্ব বা বিধানসভা ভোটের টিকিট না পাওয়ার জন্য।অনেকে টিকেট পেয়েছে ভোট জিতেছে কেউ হেরেছে।কিন্তু বিধানসভা ভোট শেষ হতেই তৃণমূল থেকে যারা বিজেপি গিয়েছিল তাদের  অনেক জনের মুখে আবার পুরনো দলে ফেরার সুর ওঠা শুরু হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে হাতে খড়ি দিল তৃণমূলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মুকুল রায় নিজের দলে ফিরে এসে। কানাখুস শোনা  যাচ্ছে মুকুল রায় এর অনুগামীরা ফিরতে চাইছেন। 


এখন কথাটা হল রাজনীতি কে নিয়ে নয় কোন দলে থেকে কে  কোন দলে গেল তা নিয়েও নয়।আমাদের  মাথাঘামানোটা দরকার আমাদের গণতন্ত্রকে নিয়ে ।এই দলবদল এক বিরাট খেলা আমাদের গণতন্ত্রের ভিত সংবিধানকে নরিয়ে দিচ্ছে। 

পূর্বে ভারত অনেক জোট সরকারের সাক্ষী হয়েছে এবং এই জোট গভারমেন্ট এর ক্ষেত্রে একটা জিনিস দেখা গেছে এমপি বা এমএলএ সমর্থন সরকার গড়তে বা ভাঙতে  আসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমান করতে পারে সারকার তার। আয়ারাম নামক একজন হারিয়ানার এমপি ১৫ দিনের মধ্যে ৩ বার কংগ্রেস দল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগ করে এবং তাদের ছেরে আবার কংগ্রেস যোগদান করে এই ঘটনা " আয়া রাম গায়া রাম' নামে বিখ্যাত।  সংখ্যাগরিষ্ঠতার এই খেলায়  যাতে এই দল ভাঙার রীতি  গণতান্ত্রিক ভীতিকে না নাড়াতে পারে তার জন্য ১৯৮৫ সালে ৫২ তম সংবিধান সংশোধনী এর মাধ্যমে anti-defection law -  আনা হয়।এই ল অনুযায়ী কোনো এমপি বা এম এল এ তার দল ছেড়ে অন্য দলে হাজির হলে তার এমপি  বা এমএলএ পদ বাতিল হবে।তবে যদি কোনো দলের একতৃতীয়াংশ সদস্য দলবদল করে তবে সেক্ষেত্রে এই আইন কাজ করবে না,  ২০০৩ সালের ৯১তম সনবিধান সংশোধনীর মাধমে ইহা একতৃতীয়াংশ থেকে দুইত্রিতিয়াংশ করা হই। এছাড়াও আরও অনেক নিয়ম আছে সদস্য পদ বাতিল হওয়ার ক্ষেত্রে। তবে এক্ষেত্রে দল বদল এর দিকে চোখ রাখা হোক।

পদ বাতিল কি আমাদের চোখে  বাধে? কেউ একজন এক দল ছেড়ে অন্য দলে যোগদান করলে তার এমপি বা এমএলএ পদ কি বাতিল হচ্ছে? না সেরকম কিছু আমরা দেখতে পাই না কারণ সেরকম কোনো পদক্ষেপ নেয়াই হয়না। পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে লোকসভার অধ্যক্ষ বা বিধানসভার অধ্যক্ষের উপর যদি তাদের কাছে কেউ এই ব্যাপারে অভিযোগ জানায় । তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ কোনো অভিযোগ জানায় না এবং দলবদল চলতে থাকে। এই আইনের ও অনেক ফাঁক আছে যেগুলি রাজনৈতিক নেতারা খুব সুন্দর ভাবে ব্যবহার করছে। স্পিকার লোকসভার অধ্যক্ষ বা বিধানসভার অধ্যক্ষ সব সময় ক্ষমতায় থাকা সরকারের সদস্য হয় ,  এটাও একটা বড় অসুবিধার কারণ। এদের কাছেই থাকে কারো সদস্যপদ বাতিল করার ক্ষমতা কিন্তু দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে এবং কোন প্রকার বাতিল দেখা যাচ্ছে না।


এখন তাহলে কথাটা হল anti-defection law এর কি কোন মূল্য আছে আর? না এই আইনের কোন ব্যবহার দেখছি না কাউকে এই বেওয়ার সমন্ধে কথা বলতে শুনছি, এখন যদি মূল্য না থাকে বা এর কার্যকারিতা সম্পন্ন করতে নানা রকম বাধা আসছে , তবে সে ক্ষেত্রে এই আইন নতুনভাবে সংশোধিত করার প্রয়োজন। এইগুলি বন্ধ করার প্রয়োজন। কারণ সংবিধান সবার  উপরে আর তাকে অমান্য করে দিনের পর দিন যা হয়ে চলেছে তা গণতন্ত্রের পক্ষে ভালো নয়। নতুন করে এই ব্যাপারে ভাবা দরকার এবং কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।