breaking

Saturday, 13 August 2022

বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী

১৯০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে “বন্দেমাতরম” পত্রিকায় একটি নিবন্ধন প্রকাশের অভিযোগে শ্রী অরবিন্দ ঘোষ, শ্রী হেমেন্দ্রনাথ বাগচি ও শ্রী অপূর্ব কৃষ্ণ বোসকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলাটির শুনানি ওঠে তদানীন্তন কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার কিংসফোর্ডের আদালতে। উক্ত মামলায় শ্রী অরবিন্দ ঘোষ ও শ্রী হেমেন্দ্রনাথ বাগচী মুক্তি পেলেও শ্রী অপূর্ব কৃষ্ণ বোসকে রাজদ্রোহের অভিযোগে দণ্ডিত করা হয়।  সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য শ্রী বিপিনচন্দ্র পাল কে ডাকা হলে তিনি সাক্ষী দিতে অস্বীকার করেন, তাকেও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলা চলাকালীন কিশোর বালক সুশীল সেন আদালত কক্ষেই বন্দেমাতরম স্লোগান দিতে থাকে। কিংসফোর্ড তাকে ধরে এনে ১৫ ঘা বেত্রাদন্ডে দণ্ডিত করেন। উক্ত সমস্ত ঘটনাবলী বিপ্লবীদের মধ্যে বিশেষত অনুশীলন সমিতির সদস্যদের মধ্যে কিংসফোর্ডের প্রতি এক তিক্ততার জন্ম দেয়। ঠিক হয় কিংসফোর্ডকে হত্যা করার পরিকল্পনা। কিংসফোর্ড আগে থেকে বুঝতে পারলে তিনি মজঃফরপুর বদলি হয়ে যান। নাছোড়বান্দা বিপ্লবীরা তাকে সেখানেই শেষ করতে উদ্যত হন। কাজটি পরিসমাপ্ত করার দায়িত্ব পড়ে বছর ১৯ এর ২ যুবক ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর উপর।
      ১৮৮৯ সালে ৩রা ডিসেম্বর মেদিনীপুরে ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও লক্ষ্মীপ্রিয়ার ঘরে জন্ম হয় ক্ষুদিরাম বসুর। ক্ষুদিরামের তিন দিদি অপরূপা, সরোজিনী ও ননীবালা। বড়দি অপরূপা তিনমুঠো ক্ষুদের বিনিময়ে তার ভাইকে মায়ের থেকে নিয়ে নেয় তারপর সন্তানটির নাম হয় ক্ষুদিরাম। জামাইবাবু অমৃতরাল বাবু তার নিজ সন্তান ললিত মোহন ও ক্ষুদিরাম কে মেদিনীপুরের হ্যামিল্টন স্কুলে একইস নিতে ভর্তি করেন। ছাত্রাবস্থায় খুদিরাম বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর সংস্পর্শে  আসে। সশস্ত্র বিপ্লববাদের প্রতি ক্ষুদিরামের ঝোঁক বাড়তে থাকে। অপরদিকে প্রফুল্ল চাকী ছিলেন বগুড়া জেলার ছেলে। শৈশবে তিনিও পিতৃহীন হয়েছিলেন। বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষের সংস্পর্শে এসে প্রফুল্ল চাকী যুগান্তর দলে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলার অত্যাচারী ছোটলাট ব্যামফিল্ড ফুলার সাহেব কে হত্যা করার যে পরিকল্পনা বারীন্দ্র কুমার ঘোষ করেছিলেন তার সহযোগী ছিলেন প্রফুল্ল চাকী ও হেমচন্দ্র কানুনগো। প্রফুল্ল চাকী ছিলেন বোম্ব বানানো ই পারদর্শী। বাংলার অন্যতম ছোটলাট এন্ড্রু ফ্রেজারকে হত্যা করার জন্য নারায়ণগড়ে প্রফুল্ল চাকীর পরিকল্পনা মাফিক রেললাইনে ডিনামাইট বসানো হয়েছিল কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
      ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী কে কিংসফোর্ড কে হত্যা করার জন্য মজঃফরপুর পাঠানো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তখন অবধি তারা দুজনে ছিল অপরিচিত। ক্ষুদিরাম বসুর ছদ্মনাম ছিল দুর্গাদাস ও প্রফুল্লচাকি দীনেশচন্দ্র রায় ছদ্মনাম নিয়ে মজঃফরপুর কিশোরী মোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মশালায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখান থেকে তারা কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। তারা দুজনে কিংসফোর্ডের উপর নজর রেখে দেখেছিলেন প্রত্যেকদিন রাত্রি আটটা ত্রিশ মিনিট নাগাদ কিংসফোর্ড তার ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে ক্লাব থেকে সরকারি বাংলোতে ফেরত আসেন। তারা দুজনে ৩০শে এপ্রিল রাতকে বেছে নেয় অপারেশনের জন্য। ঐদিন রাতে দুজনে কিংসফোর্ডের বাংলোর সামনে অপেক্ষা করতে থাকে তার ঘোড়ার গাড়ি আসা দেখে গাড়ি উদ্দেশ্যে বোমা ছুড়তে থাকে। তার পরবর্তী কাহিনী প্রায় সকলেরই জানা গাড়িতে কিংসফোর্ড এর জায়গায় ছিলেন দুজন মহিলা মিসেস কেনেডি ও নিজ কেনিডি। মিস কেনেডি ঘটনাস্থলে মারা          
 গেলেন, মিসেস কেনেডি মারা গেলেন হাসপাতালে।
ঘটনার পর পুলিশের ধাওয়া খেয়ে দুজন বিপ্লবী দুদিকে পালিয়ে গেলেন ক্ষুদিরাম বসু ছুটলেন ওয়ার্নি স্টেশনের দিকে আর প্রফুল্ল চাকী মোকামো স্টেশনের দিকে। ১৯০৮সালে ১ মে ঘটনার পরদিন ক্ষুদিরাম বসু ওয়ার্নিতে ধরা পড়লেন,২রা মে মোকামোতে প্রফুল্ল চাকী। প্রাণ বাঁচানো সম্ভব নয় জেনে প্রফুল্ল চাকী নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করলেন। ক্ষুদিরাম বসু কে ধরে আনা হল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তিনি কোন রকম রাখঢাক ছাড়াই অকপটে স্বীকার করলেন তার দোষ, এমনকি নিজের প্রাণ ভিক্ষাও তিনি করেননি। ১১ই আগস্ট এই মহান বিপ্লবীর ফাঁসি দেওয়া হয়। া